ধানের শীষে নির্বাচন করলেও কেন সংসদে যেতে চান সুলতান মনসুর

বিবিসিঃ বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও এই ফ্রন্টের একজন নেতা বলেছেন তিনি সংসদে যাবেন এবং এব্যাপারে তিনি মানসিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মৌলভীবাজারের একটি আসনে গণফোরাম থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচিত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেছেন, “সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত দলীয় সিদ্ধান্ত। এটা ভোটারদের সিদ্ধান্ত নয়। যারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন তাদের ১০০ ভাগই বলেছেন যে আপনি সংসদে যান।”
গত ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মৌলভীবাজার ২ আসনে জয়লাভ করেন। ৩০০ আসনের মধ্যে বিরোধী জোট থেকে যে মাত্র আটজন নির্বাচিত হয়েছেন মি. মনসুর তাদের একজন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে আজ সোমবারেও দেওয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে তাদের সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত এখনও বহাল আছে। বড় রকমের কারচুপির অভিযোগ এনে ঐক্যফ্রন্ট ও তাদের বড় শরিক বিএনপি নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে।
সংসদে না যাওয়ার দলীয় সিদ্ধান্তের পরও কেন তিনি সংসদে যাওয়ার কথা ভাবছেন জানতে চাইলে সাবেক এই আওয়ামী লীগ নেতাও ডাকসুর সাবেক সহসভাপতি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বিবিসি বাংলার শাকিল আনোয়ারকে বলেন, নির্বাচিত হওয়ার কারণে ভোটারদের কাছে তার দায়ভার আছে।
“নির্বাচনে শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও যারা আমাকে নির্বাচিত করেছে তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তাদের অধিকার রক্ষা, এলাকার উন্নয়ন ও মানুষের পক্ষে কথা বলার জন্যেই তো তারা আমাকে ভোট দিয়েছে।”
“এছাড়াও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহবায়ক কামাল হোসেনও ইতিবাচক ভূমিকা রাখার কথা বলেছেন, যার অর্থ হচ্ছে আমরা সংসদে যাবো,” বলেন তিনি।
তিনি বলেন, শপথ নেওয়ার ব্যাপারে আমিও ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবো। কবে করবো, কখন করবো সেটা সময় বলে দেবে।
তার নিজের দল গণফোরামও যদি দলীয়ভাবে সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তখন তিনি কী করবেন এই প্রশ্নের জবাবে মি. আহমেদ বলেন, “আমি জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে গত নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছিলাম। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য হিসেবে। এই ফ্রন্টের সিদ্ধান্ত হিসেবেই আমরা ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলাম।”
কিন্তু ধানের শীষ প্রতীক তো বিরোধী দল বিএনপির প্রতীক?
উত্তর: একসময় মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাপের প্রতীক ছিল ধানের শীষ। পরবর্তীকালে সেটা বিএনপির মার্কা হয়েছে। গত নির্বাচনে আমি এটাকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মার্কা হিসেবে নিয়েই নির্বাচন করেছি। আমি বিএনপি হিসেবে নির্বাচন করিনি। আমি বঙ্গবন্ধুর অনুসারী হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে করেছি।
প্রশ্ন: কিন্তু আপনার এলাকার ভোটাররা তো আপনাকে ধানের শীষ দেখেই ভোট দিয়েছে।
উত্তর: ধানের শীষ দেখে যেমন ভোট দিয়েছে তেমনি আমার ব্যক্তিগত অবস্থান ও গ্রহণযোগ্যতা মেনে নিয়েই আমাকে ভোট দিয়েছে।
সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেন, মৌলভীবাজারের যে আসন থেকে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন সেখান থেকে কোনদিন ধানের শীষ জয়লাভ করতে পারেনি। তার দাবি যারা ধানের শীষের পক্ষে নন তারাও তাকে ভোট দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের হয়ে তিনি ১৯৯৬ সালেও এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি দাবি করেন সেসময় তিনি তার এলাকার যে উন্নয়ন করেছিলেন সেটা গত ১০০ বছরেও হয়নি।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বিএনপি, গণফোরাম- সবাই মিলে সংসদে না যাওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিলে কী করবেন জানতে চাইলে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেন, “সময়ই কথা বলবে। এব্যাপারে এই মুহূর্তে চূড়ান্ত বক্তব্য দিতে পারবো না।”
সূত্র: বিবিসি বাংলা।