অজানা গুণবতি দণ্ডকলস

ওমর ফারুক নাঈম ::
সড়কের ধারে বিভিন্ন ফসলের জমিতে দেখা যায়। প্রাকৃতিকভাবে জন্মে এই উদ্ভিদটি। এর সাদা ফুল মুখে নিলে মিষ্টি স্বাদ অনুভূত হয় আর পাতা তেঁতো স্বাদ যুক্ত। আঞ্চলিক ভাষায় বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। এই ছোট গুল্ম জাতীয় গাছটিকে কোনো এলাকায় বলা হয় মধু গাছ আবার কোথাও কানশিকা। তবে এই গাছের আসল নাম দণ্ডকলস ।
দিন দিন কমে যাচ্ছে এই উদ্ভিদটি। আগে ব্যাপক হারে সড়কের ধারে পতিত জমিতে বিভিন্ন ফসলের বাগানে দেখা গেলেও এখন তেমন দেখা যায় না। সম্প্রতি মৌলভীবাজারের মুটুকপুর এলাকায় দেখা যায় এই গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ দণ্ডকলসের । দণ্ডকলস উদ্ভিদ এ রয়েছে নানা ঔষধি গুণ। এর পাতার রস তেঁতো হলেও ফুলের মধু মিষ্টি স্বাদের।
সর্দি ও কাশি হলে এই গাছের পাঁতা সিদ্ধ করে কালোজিরা দিয়ে খেলে উপশম হয়। কাশি হলে দণ্ডকলসের পাতা ও শিকড় রস করে আদাসহ গরম পানি দিয়ে খেলে কাশি কমে যায়।
ছোট বাচ্চাদের যদি দীর্ঘ সময় সর্দি থাকে তাহলে এই গাছের ফুল তুলে সেই ফুল মায়ের বুকের দুধের সাথে কচলিয়ে সেই দুধ খাওয়ালে সর্দি ভাল হয়ে যায়। পাতা বেটে রস করে মায়ের দুধের সাথে মিশিয়ে মাথার তালুতে দিয়ে রাখলেও সর্দি কমে যায়। বাচ্চাদের কৃমি হলে দ-কলসের পাতা রস করে ১ চামচ করে ৪-৫ দিন খাওয়ালে কৃমি মরে যাবে।
চুলকানি রোগেও কাজ করে দণ্ডকলস। এর পাতার রস কাঁচাহলুদের রস ও নারকেল তেল মিশিয়ে শরীরে মেখে রোদে শুকিয়ে গোসল করলে উপকার পাওয়া যায়।
শিশুদের পাতলা পায়খানা হলে এই পাতার রস করে খাটি মধু মিশিয়ে দুই তিন দিন খাওয়ালে উপকার পাওয়া যায়। চুলকানি হলেও এই পাতার রস কাঁচাহলুদের রসের সাথে নারকেল তেল মিশিয়ে শরীরে মাখিয়ে কিছুক্ষণ রোদে শুকিয়ে গোসল করলে ভাল উপকার পাওয়া যায়। এই ভাবে এক সপ্তাহ পর্যন্ত লাগাতে হবে। দণ্ডকলস গাছের উচ্চতা ১ থেকে দের মিটার উচ্চতা সম্পন্ন হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কয়েকটি গাছ একত্রে জন্মে ঝোপালো ভাবে। গাছের কাণ্ড শাখা প্রশাখা সবুজ ফুলের রঙ সাদা। সারা বছরই এ গাছ দেখতে পাওয়া যায় ফুল ফোঁটার আদর্শ সময় মার্চ ও এপ্রিলে।
উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক রোকশানা আক্তার বলেন, গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ দণ্ডকলস একসময় গ্রামীণ চিকিৎসায় ব্যাপকহারে ব্যবহার হতো এখনও হারবাল ওষুধ তৈরিতে এগুলো ব্যবহার হয়। নতুন প্রজন্মের অনেকেই এই গাছগুলো সম্পর্কে জানে না। ঔষধি গুণ সমৃদ্ধ এই গাছগুলোর বংশবৃদ্ধি ও রক্ষা করা দরকার বলে জানান তিনি।
মৌলভীবাজার পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি সৈয়দ মহসীন পারভেজ বলেন, “দিন দিন কমে যাচ্ছে এই উদ্ভিদটি। আগে ব্যাপক হারে সড়কের ধারে, মেঠো পথে, পতিত জমিতে আর বিভিন্ন ফসলের বাগানে এই গাছ দেখা যেত। কিন্তু এখন দণ্ডকলস আর তেমন দেখা যায় না।
তিনি বলেন, “দণ্ডকলসের গুণ না জানার কারণে আমাদের কাছে এর কদর নেই। কিন্তু গ্রামীণ জনপদে এখনো এই গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদটির ব্যবহার দেখা যায়”।