করোনাভাইরাস: প্রবাসী স্বজনদের নিয়ে সিলেটে উৎকণ্ঠা
দেশের বাইরে থাকা প্রবাসীদের নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে সিলেটে। ইতিমধ্যে ইতালি, বৃটেন, স্পেন, সিঙ্গাপুর সহ কয়েকটি দেশে থাকা স্বজনদের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবরে এই উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বশেষ মারা গেছেন লন্ডনে থাকা প্রবাসী আফরোজ মিয়া। তার মৃত্যুর পর প্রবাসী পরিবারের মনে শঙ্কা আরো বাড়ছে। এ কারনে প্রবাসীদের সুস্থতা কামনা করে সিলেটে চলছে দোয়া মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত।
সবার চাওয়া- রেমিটেন্স যোদ্ধা প্রবাসীরা যেনো নিরাপদে থাকেন। সিলেট প্রবাসী শহর হলেও অধিক সতর্কতার কারণে করোনা ভাইরাস ছড়ায়নি সিলেটে। ইতিমধ্যে সিলেটে এক দুবাই প্রবাসীকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছিলো।
পরে পরীক্ষায় মিলে তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত নন। এরপর সৌদি ফেরত এক মহিলাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে- শনিবার পর্যন্ত ৮ জন ব্যক্তিকে করোনা ভাইরাস সন্দেহে পরীক্ষা করা হয়েছে। এরমধ্যে তিনজন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। বাকি পাঁচজনকে ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ রাখা হয়। তবে কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হননি। শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে বর্তমানে শুধুই জ্বর আক্রান্ত বা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ আছে এমন রোগীকেই ভর্তি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীলরা। করোনা ভাইরাস নিয়ে সিলেটে এখনো স্বস্তিময় অবস্থা। আতঙ্কও নেই। তবে- সতর্ক সবাই। কিন্তু অস্বস্তি দেশের বাইরে থাকা প্রবাসীদের নিয়ে। সিলেটের প্রায় লাখ লাখ প্রবাসী বসবাস করেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এর মধ্যে বৃটেনে বসবাসকারীদের সংখ্যা বেশি। এরপর আছে সৌদি আরব সহ কয়েকটি দেশ। ইতালিতেও বিপুল সংখ্যক সিলেটী বসবাস করেন। ফলে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি যতই অবনতি হচ্ছে ততই টেনশন বাড়ছে সিলেটে। সিলেটের অর্থনীতির বড় চালকদার হচ্ছে প্রবাসীরা। দেশে থাকা স্বজনরা জানিয়েছেন- যুক্তরাজ্যের ইস্ট লন্ডনে এক সিলেটি মৃত্যু বরণ করেছেন। গোলাপগঞ্জের বাগিরঘাট গ্রামে তার বাড়ি। ৬৬ বছর বয়সী এই ব্যক্তির নাম আফরোজ মিয়া। শুক্রবার ভোরে রয়েল লন্ডন হাসপাতালে ৮ দিন যুদ্ধ করার পর মৃত্যুবরণ করেন তিনি। পরিবারের সদস্যরা জানান- তারা শুনেছেন আফরোজ মিয়া হার্ট অ্যটাকে মারা গেছে।
পরবর্তীতে মিডিয়ার মাধ্যমে তারা শুনেন তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা হয়েছে। আফরোজ মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার সন্তানরা বাড়িতে অবস্থান করলেও প্রথম স্ত্রী ও সন্তানরা বসবাস করেন লন্ডনে। আফরোজ মিয়াকে লন্ডনেই দাফন করা হবে বলে জানায় পারিবারিক সূত্র। শুক্রবার পর্যন্ত বৃটেনে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ১২ জন। এর মধ্যে দু’জন বাংলাদেশী। যুক্তরাজ্যে কয়েক লাখ সিলেটী বসবাস করেন। বৃটেন দ্রুত করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবরে সিলেটের সর্বত্রই উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। স্পেনে করোনা ভাইরাসে আট বাংলাদেশী আক্রান্ত হয়েছেন। স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে ওই বাংলাদেশীরা করোনায় আক্রান্ত হন। আটজনের মধ্যে তিনজনের বাড়ি সিলেটে। আর বাকি ৫ জনের মধ্যে ঢাকার দুজন, যশোরের একজন এবং অপরজনের বাড়ির ঠিকানা জানা যায়নি।
তাদের সবাই বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ইতালির মিলান সিটিতে বসবাস করেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম সজীব ও দেলোয়ার হুসেন। সজীব সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- একটি ঘরে তারা ৬ জন বসবাস করেন। সবাই গত এক মাস থেকে কাজকর্ম ছেড়ে দিয়েছেন। ঘরের নিচ থেকে একটি দোকানে গিয়ে প্রয়োজনীয় বাজার করে তারা চলে আসেন ঘরে। সুনামগঞ্জ শহরে তার পরিবারের সবাই বসবাস করেন। প্রতিদিন পরিবারের লোকজন আতংকিত হয়ে তাকে ফোন করেন। আমেরিকায় বিপুল সংখ্যক সিলেটি বসবাস করেন। সেখানে অবস্থানরত প্রবাসীদের নিয়ে দেশে থাকা স্বজনদের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যে সিলেটি বিপুল সংখ্যক শ্রমিক বসবাস করেন। করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক সৌদি আরবে ছড়িয়ে পড়ায় দেশে থাকা স্বজনরা উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় দিন যাপন করছে। প্রতিনিয়ত দেশে থাকা স্বজনরা খোজ খবর নিচ্ছেন।
ভোলাগঞ্জে পাথর আমদানি বন্ধ: করোনা ভাইরাসের কারনে ভারতের সিলেট জেলার সব রুট দিয়ে যাত্রী যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে রয়েছে পন্য আমদানী রপ্তানী। তামাবিল স্থলবন্দরের এক কর্মকর্তা জানান- ‘করোনাভাইরাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে ভারত সরকার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশি যাত্রীদের সে দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর প্রেক্ষিতে শনিবার কোন বাংলাদেশী যাত্রী ভারতে প্রবেশ করেনি। তবে বালাংদেশে অবস্থানকারী ভারতীয় নাগরিকদের ভারতে যেতে কোন বাধা দেয়া হয়নি।’ এদিকে- শুধু তামাবিল নয় সিলেট বিভাগের অন্য বন্দর ও শুল্ক স্টেশন দিয়েও মালামাল আমাদানী-রপ্তানি চালু থাকলেও বাংলাদেশীরা ভারতে যেতে পারছেন না। তামাবিলে আসা ভারতীয় ট্রাক চালকদের করোনার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর ইম্পোর্টার্স গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান মিন্টু জানান- ভোলাগঞ্জ দিয়ে গত কিছুদিন ধরে সব ধরণের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। তবে, সোমবার থেকে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হতে পারে বলে জানান তিনি।