১৫ই ও ২১শে আগস্টের উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে তার আদর্শ ও চেতনাকে ধ্বংস করা – যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের আলোচনা সভায় আব্দুল গাফফার চৌধুরী ।

১৫ই ও ২১শে আগস্টের উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে তার আদর্শ ও চেতনাকে ধ্বংস করা – যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের আলোচনা সভায় আব্দুল গাফফার চৌধুরী
স্বীকৃতি বড়ুয়া, আগস্ট ২২, ২০২১, নিউইয়র্কঃ যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাব গাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ১৫ই আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস এবং ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার শোক দিবস পালন করেন যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদ। সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন নবীর সভাপতিত্বে ২১শে আগস্ট শনিবার অনলাইন জুম কনফারেন্সের মাধ্যমে আয়োজতি আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে সংযুক্ত ছিলেন প্রখ্যাত লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী, বিশেষ অতিথি ছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান এবং খ্যাতিমান কবি ও সাহিত্যিক আসাদ চৌধুরী। আলোচনা সভায় কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতৃবৃন্দরা অংশগ্রহণ করেন।
যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বীকৃতি বড়ুয়ার পরিচালনায় আলোচনা সভার শুরুতেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মহান মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদ, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট ও ৩রা নভেম্বর এবং ২০০৪ সালের ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহত সকলের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে বঙ্গন্ধুকে নিয়ে রচিত ভিডিওচিত্র ‘ফিরে এস বঙ্গবন্ধু’ প্রদর্শন করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডঃ নুরুন নবী বলেন দেশকে স্বাধীন করার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অতি অল্প সময়ে জাতিকে সুন্দর একটি সংবিধান উপহার দেন এবং দেশ গড়ার লক্ষ্যে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে থাকেন। কিন্তু ৭১এর পরাজিত শক্তি ও ক্ষমতা লোভীরা বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারিরা পুরো বাঙ্গালী জাতিকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়। দীর্ঘ ২০ বছর বাঙ্গালী জাতি অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতি অন্ধকার যুগ থেকে আবার আলোর পথে ফিরে আসার সুযোগ পান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে লেখক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী বলেন ১৫ই আগস্ট হত্যাকাণ্ড ও ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার সময়ের ব্যবধান যদিও অনেক, দুইটি হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রমে কোন ব্যবধান নেই। ১৫ই আগস্টের উদ্দশ্য ছিল জাতির পিতাকে হত্যা করে তার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথকে রুদ্ধ করা, আর ১৪ই আগস্টের উদ্দেশ্য ছিল জাতির পিতার কন্যাকে হত্যা করে, তিনি যেন গণতন্ত্র ফিরে এনে জাতির পিতার আদর্শগুলো বাস্তবায়ন না করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা। ১৫ই আগস্টে আমরা বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী আমাদের জাতির পিতাকে স্মরণ করি আর ২১শে আগস্টে স্মরণ করি সেই জাতির পিতার কন্যাকে, যিনি তার পিতার আদর্শকে বাস্তবায়ন করার জন্য ধৈর্য্য ও সাহসের প্রমাণ দেখিয়েছেন এবং এখনো দেখিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুর আমলের সেই সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব আর এখন নেই, ধর্ম নিরপেক্ষতাও আজ উপেক্ষিত।
পাকিস্তানীরা যেভাবে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে, বাংলাদেশে উগ্র মৌলবাদীরাও সেভাবে আমাদের তরুণ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগে কিছু হাইব্রিড নেতা নিজেদেরকে ধনি বানাচ্ছে আর দেশকে দুর্নীতির পথে ঠেলে দিচ্ছে। গণতান্ত্রিক সরকার ক্রমশই আমলাতন্ত্রের হাতে চলে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে দেশকে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্ধার করার জন্য আমি সকল দেশপ্রেমিক মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানাই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, যিনি ১৯৭৫ সালের পূর্বে ৩ বছর বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুকে অত্যন্ত কাছে থেকে দেখেছেন, বলেন মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, সহানুভূতি ও ভালোবাসা বঙ্গবন্ধুর সকল কর্মকাণ্ডে প্রকাশ পেত। বঙ্গবন্ধু মনে করতেন আইন মানুষের কল্যাণের জন্য, এবং মানুষের কল্যাণের চিন্তা তার রাজনৈতিক, প্রশাসনিকসহ সকল কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত করেছিল। মানুষের উপর কিছু চাপিয়ে দেওয়াতে তিনি বিশ্বাস করতেন না, মানুষ যা সহজে বুঝতে ও গ্রহণ করতে পারে সেভাবেই তিনি কাজ করতেন। ১৫ই আগস্টের হত্যা ছিল ষড়যন্ত্রকারীদের প্রথম প্রচেষ্টা, যেন আমরা আমাদের ইতিহাস ও আমাদের সংস্কৃতি নিয়ে একটি কল্যানভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করতে না পারি। জননেত্রী শেখ হাসিনার উপর আক্রমণও ছিল ঠিক সেই একই উদ্দেশ্য, যেন আমরা আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে আর ফিরে যেতে না পারি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও, তার আদর্শ ও চেতনাকে তারা হত্যা করতে পারেনি এবং আমরা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান যে নেত্রীর দূরদর্শিতায় ও নেতৃত্বে সেই আদর্শ ও চেতনাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারছি।
বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক আসাদ চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে আসার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল, তিনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন বাঙ্গালী। শয়নে, স্বপনে, জাগরণে তিনি বাংলাদেশের মানুষের কথা চিন্তা করতেন। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখে সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়ে আমাদেরকে একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছিলেন । বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে, বাঙ্গালীর গৌরবের জায়গাগুলোকে সনাক্ত করে সেগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছিল। ষড়যন্ত্রকারীরা যে এখনো সক্রিয় তা আমরা প্রমাণ পাই আমরা যখন দেখি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে, বাঘা জতিনের ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে, ওস্তাদ আলাঊদ্দিন খাঁর বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, সবকিছুর প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল অগাদ ভালোবাসা। বঙ্গবন্ধু কাজি নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশে এনেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেছে থাকলে উনাকেও তিনি আনতেন। তিনি বলেন, ৭৫এর পরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতি।
সভায় অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের উপদেষ্টা এম এ সালাম, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে সাংবাদিক ফাহিম রেজা নুর ও দেওয়ান বজলু, সদস্য শেখ আতিকুল ইসলাম, কানাডা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি আমিন মিয়াঁ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ ক্যালিফোর্নিয়া শাখার সভাপতি নজরুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক রানা মাহমুদ, আটলান্টা শাখার সভাপতি সাংবাদিক মঞ্জুরুল কবির রুমি, পেনসিলভেনিয়া শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের বীর প্রতীক, গ্রেটার ওয়াশিংটন শাখার সভাপতি দস্তগির জাহাঙ্গীর ও সাধারণ সম্পাদক নাসরিনা আহাম্মদ, মিশিগান শাখার আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আহাদ আহমেদ, এইচ ডি বাংলার সিইও সাইফুর রহমান জিতু, প্রমুখ। সভায় আরও সংযুক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ বোস্টন শাখার আহ্বায়িকা সফেদা বসু, মাহবুব মাসুদ, মোহাম্মদ সাইদুল হক, প্রমুখ। যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাফায়েত চৌধুরী আলোচনা সভায় অংশগ্রহনের জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞ্যাপন করেন।