একুশে গানের রচয়িতা,কিংবদন্তী সাংবাদিক, আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীকে শহীদ মিনারে সর্বস্তরের জনসাধারনের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন,,ও ইউকে বিডি টিভির শোক প্রকাশ,
নাজমুল সুমন,
৫২ এর ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’-এর রচয়িতা,
বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী, কিংবদন্তী সাংবাদিক, কলামিস্ট শ্রদ্ধেয় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর নামাজে জানাজা বৃটেনের বিভিন্ন শহর থেকে আগত বিপুল সংখ্যক লোকের উপস্তিতিতে ২০শে মে শুক্রবার বাদজুম্মা যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডনের ব্রিকলেন জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে জানাজায় ঈমামতি করেন ব্রিকলেন মসজিদের খতিব বিশিষ্ট মাওলানা নজরুল ইসলাম।
এসময় আবদুল গাফফার চৌধুরীর ছেলে অনুপম চৌধুরী সবার কাছে বাবার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনার জন্য দোয়া কামনা করেছেন।
জানাজা শেষে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য লন্ডনের আলতাব আলী পার্ক শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হলে বৃষ্টি উপেক্ষা করেও হাজারো মানুষ তাদের এই কিংবদন্তী সাংবাদিককে বিদায় দিতে আসেন। আবদুল গাফফার চৌধুরীর মরদেহ ঢেকে রাখা হয় বাংলাদেশের পতাকা দিয়ে। এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গ্রুপ আনুষ্ঠানিক স্যালুট জানায় মুক্তিযুদ্ধের এই শীর্ষ কলম সৈনিককে।বৃটেনের বাংলাদেশের হাইকমিশনার হ্যার এক্সেলেন্সি সাইদা মুনা তাসনিম, ফুল দিয়ে শেষ বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। এরপর একে একে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ, সাধারন সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার উজ্জামান চৌধুরী, ও সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ চৌধুরী সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, ইউকে বিডি টিভির পক্ষ থেকে ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম, সহ যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, জাসদ, সিপিবি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই ইউকে, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠি, জাস্টিস ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড ১৯৭১ ইন ইউকে, ও প্রজন্ম ৭১ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাংবাদিক, ব্যাবসায়ী ও কমিউনিটি সংগঠনের পক্ষ থেকে ও কমিউনিটির সর্বস্তরের হাজারো জনতা ফুলেল শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে বিদায় জানান। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্বায় ও ভালোবাসায় সিক্ত বিদায় নেওয়া আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ দেশে পাঠানো হচ্চে শিগগিরই। বাংলাদেশে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে স্ত্রীর কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
শহীদ মিনার অভিমূখে মানুষ শ্রদ্ধা জানানো শেষে শোক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বলেন, ‘একুশের গানের রচয়িতা, কিংবদন্তী সাংবাদিক গাফ্ফার চৌধুরীকে ভাষা আন্দোলনের প্রতিক শহীদ মিনারের বেদী থেকে আমরা শেষ বিদায় জানাচ্ছি, এটি অবশ্যই একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা’। তিনি বলেন, ‘জনাব আবদুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুতে দেশ ও জাতি হারালো তার এক শ্রেষ্ঠ সন্তানকে। ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটি হারালো তাঁদের বাতিঘর ও অভিভাবককে।বাংলাদেশের বরেণ্য সাংবাদিক,সাহিত্যিক ও কলামিষ্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী মহান একুশের অমর সংগীত, তাঁর অসাধারণ লেখা ও কমের্র মধ্য দিয়ে আমাদের মাঝে অমর হয়ে থাকবেন এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যও অশেষ অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন’।
এদিকে ইউকে বিডি টিভি ও জাস্টিস ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড ১৯৭১ ইন ইউকের প্রধান উপদেষ্টা কিংবদন্তিতুল্য সাংবাদিক, কলামিস্ট, বুদ্ধিজীবি ও সাহিত্যিক শ্রদ্ধেয় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে ইউকে বিডি টিভির চেয়ারম্যান ও জাস্টিস ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড ১৯৭১ ইন ইউকের সভাপতি মোহাম্মদ মকিস মনসুর ও ইউকে বিডি টিভির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার খায়রুল আলম লিংকন, ফাইন্যান্স ডিরেক্টর শাহ শাফি কাদির ও পোগ্রাম ডিরেক্টর হেলেন ইসলাম, মিডিয়া ডিরেক্টর শাহ নেওয়াজ চৌধুরী সুমন,
ইউকে বিডি টিভি ডট কম এর সম্পাদক কাওছারুল আলম রিটন, নির্বাহী সম্পাদক কামরুল ইসলাম, ইউ কে বিডি টিভি ডটকমের বার্তা সম্পাদক এম শাহজাহান মিয়া সহ ইউ কে বিডি টিভি পরিবারের সকল উপদেষ্ঠা ও পরিচালকবৃন্দ এক যুক্ত শোকবার্তায় গভীর শোক ও শোকাহত,পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন সহ উনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন।
শোকবার্তায় ইউকে বিডি টিভির চেয়ারম্যান ও জাস্টিস ফর বাংলাদেশ জেনোসাইড ১৯৭১ ইন ইউকের সভাপতি মোহাম্মদ মকিস মনসুর বলেন প্রয়াত বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী ছিলেন এক বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী। যুক্তরাজ্য প্রবাসী স্বনামধন্য এ ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশের ইতিহাসের নানা বাঁক বদলের সাক্ষী। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে নিবন্ধিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা সাপ্তাহিক জয় বাংলার প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। ভাষা আন্দোলনের স্মরণীয় গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’র রচয়িতা হিসেবে বাঙালির হৃদয়ে চিরদিন বেঁচে থাকবেন। শ্রদ্ধেয় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ছিলেন আমাদের আত্মার আত্মীয়,আব্দুল গাফফার চৌধুরী হচ্ছেন একটি ইন্সটিটিউশন। তিনি ছিলেন জাতির বিবেক।উনার সবচেয়ে বড় গুণ ছিল, তিনি যা সত্য বলে মনে করতেন তা অকপটে প্রকাশ করতেন।বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রাম, স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িকতা আন্দোলন ও ১/১১-এর প্রয়াত সাংবাদিক-কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরীর লেখনি বাঙালি জাতিকে শক্তি ও সাহস যুগিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে তিনি ছিলেন আপোষহীন। তাঁর মৃত্যু জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
কালজয়ী গান ও লেখনীর মাধ্যমে তিনি প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে চির অম্লান হয়ে থাকবেন বলে অভিমত ব্যাক্ত করে মহাণ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেনো উনাকে জান্নাতবাসী করেন এই দোয়া করার জন্য সবার প্রতি বিনীতভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন।।
এখানে উল্লেখ্য যে গত ১৯ মে ২০২২ ইংরেজি বৃহস্পতিবার লন্ডনের বার্নেট হাসপাতালে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে শেষ নিঃশাষ ত্যাগ করেছেন।
৮৮ বছর বয়সী ভাষা সৈনিক গাফ্ফার চৌধুরী কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’-এর রচয়িতা বাংলাদেশের গর্ব আব্দুল গাফফার চৌধুরী দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভূগছিলেন।
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি”র মতো অসংখ্য কালজয়ী গানের সুরকার আবদুল গাফফার চৌধুরী বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাস, স্মৃতিকথা, ছোটদের উপন্যাসও লিখেছেন তিনি।
জীবদ্দশায় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ইউনেস্কো সাহিত্য পুরষ্কার সহ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পদক, একুশে পদক, শেরেবাংলা পদক, বঙ্গবন্ধু পদকসহ আরও অনেক পদকে ভূষিত হন।
আবদুল গাফফার চৌধুরী ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা হাজি ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মা মোসাম্মৎ জহুরা খাতুন। তিন ভাই, পাঁচ বোনের মধ্যে বড় ভাই হোসেন রেজা চৌধুরী ও ছোট ভাই আলী রেজা চৌধুরী। বোনেরা হলেন মানিক বিবি, লাইলী খাতুন, সালেহা খাতুন, ফজিলা বেগম ও মাসুমা বেগম।
আবদুল গাফফার চৌধুরী উলানিয়া জুনিয়র মাদরাসায় ক্লাস সিক্স পর্যন্ত লেখাপড়া করে হাইস্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। ১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে বিএ অনার্স পাস করেন।
১৯৪৬ সালে তার পিতার মৃত্যুর পর তাকে চলে আসতে হয় বরিশাল শহরে। ভর্তি হন আসমত আলী খান ইনস্টিটিউটে। সেসময়ে আর্থিক অনটনের শিকার হয়ে উপার্জনের পথ খুঁজতে থাকেন।
১৯৪৬ সালে স্কুলের ছাত্র অবস্থায় কলাম লেখা শুরু করেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। বরিশাল হিতৈষী পত্রিকায় তার প্রথম লেখার শিরোনাম ছিল ‘সমাচার সন্দেশ’। ৬০ বছর ধরে মিঠাকড়া, ভীমরুল, তৃতীয় মত, কাছে দূরে, একুশ শতকের বটতলায়, কালের আয়নায়, দৃষ্টিকোণ ইত্যাদি শিরোনামে কলাম লিখেছেন তিনি।
১৯৪৭ সালে তিনি কংগ্রেস নেতা দুর্গা মোহন সেন সম্পাদিত ‘কংগ্রেস হিতৈষী’ পত্রিকায় কাজ শুরু করেন। বরিশাল শহরে তিনি কিছুদিন একটি মার্কসবাদী দল আরএসপি’র সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ছাত্র জীবনেই তার সাহিত্য চর্চা শুরু হয়। ১৯৪৯ সালে সওগাত পত্রিকায় তার প্রথম গল্প ছাপা হয়। বরিশালের সন্তান শামসুদ্দীন আবুল কালামের লেখা তখন কলকাতার প্রধান পত্রিকাগুলোতে ছাপা হতো।
কলাম ছাড়াও কবি, নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক হিসেবে পরিচিত তিনি। বঙ্গবন্ধু হত্যার ওপর লেখা ‘পলাশী থেকে ধানমণ্ডি’ তার বিখ্যাত নাটক।
১৯৫০-এর দশকে সাংবাদিকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। পেশাগত কাজে সফলতার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক, ইউনেস্কো পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মানিক মিয়া পদকসহ দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পদক ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।।
১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স পাস করে ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার রাজনৈতিক পত্রিকা ‘চাবুক’ এর দায়িত্ব নেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের মুখপাত্র ‘জয়বাংলা’য় কাজ করেন গাফ্ফার চৌধুরী। ১৯৭৪ সালে অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে চলে যান তিনি। এরপর সেখানেই স্থায়ী হন।
যুক্তরাজ্য যাওয়ার পর প্রথম দিকে তিনি বিভিন্ন গ্রোসারি দোকানে কাজ করেন। এরপর ১৯৭৬ সালে তিনি ‘বাংলার ডাক’ নামে এক সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদনা করেন। ‘সাপ্তাহিক জাগরণ’ পত্রিকায়ও তিনি কিছুদিন কাজ করেছেন।
১৯৮৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি সাতজন অংশীদার নিয়ে ‘নতুন দিন’ পত্রিকা বের করেন। এরপর ১৯৯০ সালে ‘নতুন দেশ’ এবং ১৯৯১ সালে ‘পূর্বদেশ’ বের করেন। প্রবাসে বসে গাফফার চৌধুরী বাংলাদেশের প্রধান পত্রিকাগুলোতে নিয়মিত লিখতেন। বাংলাদেশের শীর্ষ দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত আবদুল গাফফার চৌধুরীর রাজনীতি, সমসাময়িক ঘটনা ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী নিয়ে লেখা কলাম অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলো। লন্ডন থেকে দেশের সংবাদপত্রে নিয়মিত কলাম লেখেন তিনি।
কলাম ছাড়াও কবি, নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক হিসেবে পরিচিত তিনি। বঙ্গবন্ধু হত্যার ওপর লেখা ‘পলাশী থেকে ধানমণ্ডি’ তার বিখ্যাত নাটক।
১৯৫০-এর দশকে সাংবাদিকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। পেশাগত কাজে সফলতার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক, ইউনেস্কো পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মানিক মিয়া পদকসহ দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক পদক ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।।