বৃটেনের রানি দ্বিতীয় এ্যালিজাবেথ চলে গেছেন না ফেরার দেশে, বিশ্বময় শোকের ছায়া,।

মকিস মনসুর,
বৃটেনের রানি দ্বিতীয় এ্যালিজাবেথ মৃত্যুবরণ করেছেন।
মৃত্যুকালে রানির বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর।
বৃটেনের বাকিংহাম প্যালেস থেকে এ খবর জানানো হয়েছে।
এলিজাবেথ আলেকজান্দ্রা মেরি বা দ্বিতীয় এলিজাবেথ এর মৃত্যুতে বৃটেন সহ সমগ্র বিশ্বময় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
রানি এলিজাবেথ শেষ সময়ে স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে ছিলেন। এখানে গ্রীষ্মকালীন সময় কাটাচ্ছিলেন তিনি। তার সঙ্গে তার বড় ছেলে ছিলেন। অসুস্থতার খবর জানার পর রানির পাশে থাকার জন্য তার কাছে ছুটে আসেন তার ছেলে-মেয়ে ও রাজ পরিবারের অন্যন্য সদস্যরা।
এখানে উল্লেখ্য যে এলিজাবেথ আলেকজান্দ্রা মেরি বা দ্বিতীয় এলিজাবেথ (ইংরেজি: Elizabeth II, জন্ম: ২১ এপ্রিল, ১৯২৬) ছিলেন বিশ্বের ১৬টি সার্বভৌম রাষ্ট্র, অর্থাৎ কমনওয়েলথ রাষ্ট্রসমূহের রাণী ও রাষ্ট্র প্রধান ছিলেন। কমনওয়েলথ রাষ্টসমূহ হচ্ছে: যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, নিউজিল্যান্ড, জামাইকা, বারবাডোস, বাহামাস, গ্রেনাডা, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, টুভালু, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডাইন, বেলিজ, অ্যান্টিগুয়া ও বার্বুডা এবং সেন্ট কিট্স ও নেভিস।
কমনওয়েলথ প্রধান ছাড়াও তিনি ৫৪ সদস্যবিশিষ্ট কমনওয়েলথ অফ নেশনসেরও প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।কমনওয়েলথ অফ নেশনসের মধ্যে ভারত বর্ষের ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ সহ আরও ৫১টি দেশ এ সংস্থার অন্তর্ভূক্ত। মূলত ব্রিটিশরা পূর্বে যেসব দেশ শাসন করেছেন তারাই এই সংস্থার অন্তভূর্ক্ত। দ্বিতীয় এলিজাবেথ যুক্তরাজ্যের শাসনকর্তা এবং চার্চ অফ ইংল্যান্ডেরও প্রধান ছিলেন।
তার পিতা ষষ্ঠ জর্জ ছিলেন ১৯৩৬ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রধান। এলিজাবেথ ছিলেন রাজা জর্জের প্রথম সন্তান। ২১ এপ্রিল ১৯২৬ সালে এলিজাবেথ মেফেয়ারের লন্ডন হাউসে জন্মগ্রহণ করেন। এলিজাবেথের বোন প্রিন্সেস মার্গারেট ১৯৩০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। মারিয়ন ক্রফোর্ডের তত্ত্বাবধানে এলিজাবেথের ঘরোয়া পরিবেশে শিশুশিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। এলিজাবেথ নিজ বাড়িতে শিক্ষাগ্রহণ করেছেন।
১৯৩৭ সালে এলিজাবেথের বাবা ৬ষ্ঠ জর্জ ব্রিটেনের রাজার আসনে বসেন। এলিজাবেথ ছিলেন তখন ব্রিটিশ সিংহাসনের একমাত্র উত্তরাধিকারী। ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে এলিজাবেথ নরফকে অবস্থান করেন। ১৯৪০ সালের শুরুতে স্বল্প সময়ের জন্য উইন্ডসরে অবস্থান করেন। ১৯৪০ সালের মে থেকে উইন্ডসরের ক্যাসেলে থাকা শুরু করেন এলিজাবেথ। ১৯৪০ সালে এলিজাবেথ প্রথম রেডিও বিবিসিতে শিশুদের উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রদান করেন। ১৯৪৩ সালে ১৬ বছর বয়সে এলিজাবেথ প্রথম জনসম্মুখে আসেন। ১৯৪৫ সালে তিনি সামরিক বাহিনীতে প্রশিক্ষণের জন্য যোগদান করেন।
বিয়ে
১৯৪৭ সালে এলিজাবেথের দাম্পত্য সঙ্গী হলেন প্রিন্স ফিলিপ, ডিউক অফ এডিনবরা। প্রিন্স ফিলিপ গ্রীস ও ডেনমার্কের রাজকীয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বিয়ের পূর্বমুহুর্তে প্রিন্স ফিলিপ যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন ও নাম পরিবর্তন করেন ফিলিপ মাউন্টব্যাটেন নামে। বিয়ের দিন তিনি ডিউক অব এডিনবরা পদবীধারী হন ও ১৯৫৭ সালে যুক্তরাজ্যের প্রিন্স হন। তাদের চার সন্তান রয়েছে: চার্লস, অ্যানি, অ্যান্ড্রু এবং এডওয়ার্ড।
ঢাকা ভ্রমণ
রানি এ্যালিজাবেথ দ্বিতীয় ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশের গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বৈরাগীরচালা গ্রাম দেখতে গিয়েছিলেন।
ব্রিটেনের রাণী এলিজাবেথ দু’বার ঢাকায় এসেছেন। প্রথমবার এসেছিলেন পূর্ব পাকিস্তান আমলে। ১২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬১ সালে রাণীর রাজকীয় বিমান নেমেছিল পুরোনো বিমানবন্দরে। রমনা পার্কের সামনে একটি পুরোনো বাড়ি সাজানো হয়েছিল রাণীর জন্য। সেই বাড়িটি বর্তমানে বঙ্গভবন। ১৩ ফেব্রুয়ারি রাণী বের হয়েছিলেন স্টিমারে বুড়িগঙ্গা ভ্রমণে। ভ্রমণ শেষে রাণী যান আদমজী জুট মিলে।
১৯৮৩ সালের নভেম্বর মাসে তৎকালীন সামরিক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে চার দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। এটিই স্বাধীন বাংলাদেশে তার একমাত্র সফর।
চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে তিনি জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছিলেন।
পাশাপাশি একটি স্বনির্ভর গ্রাম দেখতে ১৬ নভেম্বর তিনি ঢাকা থেকে ট্রেনে গাজীপুরের শ্রীপুর স্টেশনে যান। এ সময় তার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট এরশাদও সফরসঙ্গী ছিলেন। স্টেশন থেকে গাড়িতে চেপে শ্রীপুর উপজেলার বৈরাগীরচালা গ্রামে যান।
রাণীর সফর উপলক্ষে গ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছিল। কাঁচা রাস্তাগুলো রাতারাতি পাকা করা হয়। আর গ্রামে প্রথমবার বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হয়, যা ওই গ্রামে কলকারখানা গড়ে উঠতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করে।
১৫ প্রধানমন্ত্রী রানির শাসনামলে
তিনি এমন এক সময়ে বৃটিশ রানি হয়েছিলেন যখন ব্রিটেন তার সাম্রাজ্যের বেশিরভাগ অংশ ধরে রেখেছিল।
উইনস্টন চার্চিল ছিলেন প্রথম প্রধানমন্ত্রী যিনি তার শাসনামলে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, জোসেফ স্টালিন সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা ছিলেন, তখন কোরিয়ান যুদ্ধ চলছে। লিজ ট্রাস রানির শাসন আমলের ১৫ তম প্রধানমন্ত্রী। এই সংখ্যক প্রধানমন্ত্রী কোনো রাজশাসনকর্তার অধীনে এখন পর্যন্ত বিশ্বে অনন্য রেকর্ড।