মৌলভীবাজারে জমে উঠেছে কোরবানির গবাদিপশুর হাট

চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে জেলার অস্থায়ী ও স্থায়ী হাট বাজারগুলো কোরবানির গবাদি পশুর জন্য প্রস্তুত হলেও প্রতিবছরের মতো এবারও ব্যতিক্রম।
এবছর জেলার ৭টি উপজেলার ১৯টি স্থায়ী ও ১৫ অস্থায়ী মিলে ৩৪ টি গবাদিপশুর হাট এখন বেশ জমে উঠেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির এই সময়য়ে গবাদিপশুরও দাম বাড়তি।
খাদ্যদ্রব্যসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় গবাদিপশুগুলোর দামও ঊর্ধমুখী। এমনটি জানাচ্ছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা।
তবে এবছর গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে জেলার কৃষক ও খামারিরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। প্রাণিসম্পদ বিভাগের চরম উদাসীনতায় এ রোগের দ্রুত বিস্তার ঘটে।
কৃষক ও খামারিদের অভিযোগ প্রাণিসম্পদ বিভাগের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্টদের এ রোগে গবাদিপশু আক্রান্ত হওয়ার শুরুর দিকে তাদের অবগত করেও সহযোগিতা মিলেনি।
নির্দিষ্ট অংকের টাকা ছাড়া প্রাণিসম্পদ বিভাগের ডাক্তাররা সরজমিনে যেতে অনাগ্রহী। তাই বাধ্য হয়ে তারা স্থানীয় গবাদিপশুর ডাক্তার ও ফার্মেসী নির্ভর চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জেলার ৩৪টি বাজারে গরু, ছাগল, ভেড়াসহ নানা জাতের হাঁস ও মোরগ বিক্রি হলেও ব্যতিক্রম জেলার কুলাউড়া উপজেলার ও সিলেট বিভাগের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী গবাদিপশুর হাট ব্রাহ্মণবাজার ও কমলগঞ্জের আদমপুর বাজার।
ওই বাজার দুটিতে অন্যান্য গবাদিপশুর সাথে মহিষও বিক্রিয় হয়। ব্রাহ্মণবাজারে গবাদিপশুর হাট বসে সপ্তাহে প্রতি সোমবার আর আদমপুর বাজারে শুক্রবার।
তবে কোরবানি উপলক্ষে বাজার চলে একটানা ঈদের দিন পর্যন্ত। জেলা খামারিরা জানান এবছর বড় গরু বা মহিষের চেয়ে কোরবানি উপযুক্ত ছোট ও মধ্যম গরু ও মহিষের চাহিদা অনেক বেশি।
চাহিদা অনুযায়ী যোগান না থাকায় ছোট ও মধ্যম সাইজের গুরু ও মহিষের দামও অনেক বেশি। বড় গরুর যোগান বেশি হলেও ক্রেতা তুলনামূলক কম।
এজেলায় পাহাড়,নদী ও হাওর বেষ্টিত থাকায় গরুর সাথে মহিষেরও ছোট বড় অনেক খামারই রয়েছে। তবে স্থানীয় ভাবে মহিষের মাংসের তেমন চাহিদা না থাকায় চট্রগ্রামসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে ওই বাজার দু’টিতে ক্রেতারা তা ক্রয় করতে আসেন।
জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগের তথ্যমতে এবছর আসন্ন ঈদুল আজহায় জেলায় ৬২ হাজার ৫২টি পশু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এরমধ্যে গরু ৪৩ হাজার ৬১৮, মহিষ ২ হাজার ৪২২ ও ছাগল-ভেড়া ১৫ হাজার ৯২২টি।
৬২ হাজার ৫২টি পশুর মধ্যে খামারিভাবে ৩৯ হাজার ৪৮৯ ও পারিবারিকভাবে কৃষক পর্যায়ে ২২ হাজার ৫৬৫টি। জেলায় এবছর কোরবানির পশুর মোট চাহিদা রয়েছে ৮০ হাজার ৬শটি।
খামারি রয়েছেন ৫ হাজার ৫শ ৫১ জন। তবে কোনো মাঠ জরিপ ছাড়াই তাদের এমন অনুমান নির্ভর চাহিদা ও যোগানের তথ্য ও পরিসংখ্যান নিয়ে সচেতন মহল,খামারি ও প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের নানা অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায় জেলা জুড়ে খামারি ও কৃষকরা পারিবারিকভাবে কোরবানির এসব পশু প্রস্তুত করেছেন। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তারা লাভের আশায় পশুর বাড়তি যত্ন আর লালন-পালনে ব্যস্ত সময় পার করেন।
গেল মাসের শেষের দিক থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে গরু আক্রান্ত হওয়ায় কৃষক ও খামারিদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।
জানা যায় এলএসডি বা লাম্পি স্কিন হল এটি একধরনের ভাইরাল চর্মরোগ। যা হলে গরুর মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়। এ রোগে হলে গরু বা বাছুর প্রথম জ্বরে আক্রান্ত হয়।
পরে খাওয়া বন্ধ করে দেয়। জ্বরের সঙ্গে মুখ ও নাক দিয়ে লালা বের হয় এবং পা ফুলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে ওই আক্রান্ত গরু গুলো স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেওয়াতে এখন অনেকটাই ভালোর দিকে।
তরুণ খামারিরা জানান গবাদিপশু পালনে খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে নতুন করে কেউ খামার করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। তারা বলছেন বাজারে গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়াই খরচ অনেক বেড়েছে। ভালো দাম না পাওয়া গেলে তাদেরকে লোকসান গুনতে হবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো: আব্দুস ছামাদ জানান, বৈশ্বিক কারণে খাদ্যের দাম বাড়তি। তবে গবাদিপশুর দামও বেড়েছে।
অনুমান নির্ভর জেলা কোরবানি পশুর চাহিদা ও যোগানের পরিসংখ্যানের বিষয়ে তিনি বলেন লোকবল কম থাকায় সঠিক পরিসংখ্যানে কিছুটা ব্যতয় হতে পারে।
খামারি ও কৃষকদের ডাক্তারদের নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে স্বীকার করে বলেন, কেউ যদি নিজের ইচ্ছায় তার প্রয়োজনে লেনদেন করলে সেটা অন্য বিষয়। এরকম অনেকেই দিচ্ছেন।
কিন্তু দরাদরি করে চিকিৎসা সেবা দেওয়া এটা ঠিক নয়। এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোভিড-১৯ এর পর থেকে জেলায় আমাদের সহযোগিতায় কোরবানির পশু অনলাইনেও বিক্রি হচ্ছে।