মৌলভীবাজারে সর্ববৃহৎ দুর্গোৎসবের শেষ মুহুর্থের প্রস্তুতি চলছে, ১০৩৬টি মণ্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে

মৌলভীবাজার জেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ দুর্গোৎসব জাঁক-জমকপূর্ন পালনের সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। আর মাত্র কয়েকদিন বাকী, শেষ মুহুর্থে চলছে প্রতিটি মন্ডপে রং তুলি দিয়ে প্রতিমা সাজানোর কাজ। এবছর ১০৩৬টি মণ্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা অনুষ্ঠিত হবে আশা করছেন আয়োজকরা। পাশাপাশি পূজা মন্ডপ ঘিরে সব ধরনের নিরাপত্তার প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন।
শারদীয় দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে মৌলভীবাজার জেলার পূজা মণ্ডপগুলোতে প্রতিমার শেষ মুহুর্থের সাজ-সজ্জার কাজ এগিয়ে চলছে। সর্ববৃহৎ এই পূজা সুষ্টুভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রস্তুতি চলছে প্রতিটি মন্ডপে। পূজামণ্ডপ গুলোতে প্রতিমা তৈরী শেষে রং তুলি আচড়ে সাজিয়ে তোলতে প্রতিমা শিল্পীরা দিন রাত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি ডেকোরেটর কর্মীরা পেন্ডেল তেরীর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
মৌলভীবাজার শহরের বিভিন্ন মন্ডপ ঘুরে দেখা যায়, মৌলভীবাজার শহরের চৌমোহনা নতুন কালীবাড়ি, ফরেষ্ট অফিস রোড, পশ্চিমবাজার দূর্গাবাড়ী, ত্রিনয়নী সহ বিভিন্ন অলিগলিতে চলছে পূজার আয়োজন। ছোট-বড় বিভিন্ন মণ্ডপে শেষ মুহুর্থের প্রতিমার সাজসজ্জার কাজ চলছে।
জেলায় মোট ১০৩৬ টি মন্ডপের মধ্যে ৮৮৪ টি সর্বজনীন এবং ১৫১ টি ব্যক্তিগত পূজামন্ডপ। বড়লেখা উপজেলায় ১৫৩টি, জুড়ী উপজেলায় ৭১টি, কুলাউড়া উপজেলায় ২২২টি, রাজনগর উপজেলায় ১৩৮টি, কমলগঞ্জ উপজেলায় ১৬২টি, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ১৭৩টি, মৌলভীবাজার উপজেলায় ১১৭টি মণ্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
পূজামন্ডপ সমূহের মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ ৯০টি, গুরুত্বপূর্ণ ২৯৫ এবং সাধারণ ৬৫১ টি রয়েছে। জেলায় সর্বমোট ৮২ টি বিটে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ অফিসার ও ফোর্স মোতায়েন থাকবে।
মৌলভীবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মহিম দে জানান, আগামী ২০ অক্টোবর দেবীর বোধনের মধ্যদিয়ে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকত শুরু হবে। জাঁক-জমকপূর্ন ভাবে পূজা উদযাপন করতে প্রশাসনের সাথে একাধিক বৈঠক হয়েছে। পূজা মন্ডপগুলোতে নিজ উদ্যোগে সেচ্ছাসেবক বাহিনী, সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থাসহ বেশকিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সবাইকে নিয়ে শান্তিপূর্ন ও উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে তারা আশাবাদী।
পুলিশ সুপার মোঃ মনজুর রহমান পিপিএম (বার) বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এবছর নিরাপত্তা পরিকল্পনাকে তিনভাগে বিভক্ত করে সাজিয়েছি। বিকাল ৪টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত সময়ে যেখানে পূজা পালন করতে আসা নারী-পুরুষের আগমন বেশি হয় সেসময়টাকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছি। পাশাপাশি রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত সময়টাকে অতি গুরুত্বপূর্ণ সময় হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছি। আর ভোর ৬টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত মোট তিনভাগে আমাদের নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছি। প্রতিটি পূজামণ্ডপে স্থায়ী ফোর্স হিসেবে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্যদের পাশাপশি মোতায়েন থাকবে আনসার সদস্যও। গোয়েন্দা নজরদারীও থাকবে প্রতিটি মণ্ডপে মণ্ডপে। এছাড়াও পূজা উদ্যাপন কমিটির সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখার জন্য হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হয়েছে।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, সাংবাদিকদের মাধ্যমে জেলার সকল নাগরিকদের প্রতি আমার আহবান, পূজাকে কেন্দ্র করে যেকোন ধরণের গুজব রোধে সবাই পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন। কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেন সে বিষয়েও সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহবান জানান তিনি।
দুর্গাপূজায় মৌলভীবাজার জেলায় সর্বমোট ৮২টি বিটে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অফিসার ও ফোর্স মোতায়েন করা হবে। অধিক গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ এই ৩ ক্যাটাগরিতে ভাগ করে অফিসার ও ফোর্স মোতায়েন করা হবে। জেলার বিশেষ ৫টি পূজামন্ডপের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে।
জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুমে ২টি সেক্টরে দূর্গাপূজা মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। সদর, রাজনগর, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ থানা সেক্টর-১ এর আওতাভুক্ত হবে এবং কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা সেক্টর-২ এর আওতাভুক্ত হবে। জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের ২টি সেক্টরে সাইবার মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। সদর, রাজনগর, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ থানা সেক্টর-১ এর আওতাভুক্ত হবে এবং কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা সেক্টর-২ এর আওতাভুক্ত হবে। এছাড়া জেলার সকল অফিসার ও ফোর্স সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে সাইবার মনিটরিং করবেন।