জমজমাট ডলার-পাউন্ড কেনাবেচার অবৈধ দোকান, মৌলভীবাজারে বেপরোয়া হুন্ডি ব্যবসা

প্রবাসী ও পর্যটন অধ্যুষিত মৌলভীবাজারে জমজমাট অবৈধ হুন্ডি ব্যবসা। জেলার ৭ টি উপজেলার প্রতিটি শহর ও হাট বাজারে নানা কায়দায় কৌশলে চলছে এমন রমরমা ব্যবসা। অভিযোগ উঠেছে দীর্ঘদিন থেকে মানি এক্সচেঞ্জের নামে অবৈধভাবে এমন হুনডি ব্যবসা চললেও তা বন্ধে তৎপর নয় সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন।
জানা যায় নির্দিষ্ট ব্যাংক ছাড়া জেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত একটি মাত্র ফরেন মানি এক্সচেঞ্জের বৈধ (সৈয়দ মানি এক্সচেঞ্জ, বেরিপাড়,দর্জিমহল্লা মৌলভীবাজার) দোকান থাকলেও অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের দোকান প্রায় অর্ধশতাধিক। জেলা জুড়ে দীর্ঘদিন থেকে নাম সর্বস্ব ব্যবসার আড়ালে চলছে এমন রমরমা হুন্ডি ব্যবসা। এই অবৈধ ব্যবসায় দেশ ও প্রবাসে গড়ে উঠা প্রভাবশালী চক্রের খপ্পরে পড়ে অধিক মুনাফা ও ব্যাংকিং নানা ঝক্কি ঝামেলা ছাড়াই দ্রুত সময়ে ঘরে বসেই টাকা পাওয়ার সুযোগে প্রবাসী ও তাদের পরিবার হুন্ডির দিকে ঝুঁকছেন। এতে করে বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স পাঠাতে নিরুৎসাহীত হচ্ছেন এজেলার প্রবাসীরা। দেশে চলমান ডলার সংকটের ক্রান্তি লগ্নে যে পন্থাটি ডলার ঘাটতি পূরণে অন্যতম নিয়ামক হিসেবে শক্তিশালী ভূমিকা রাখে তা হল প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্স। কিন্তু এজেলায় দেদারছে যত্রতত্র হুন্ডি ব্যবসায়ী থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রা আসছে কম। জানা যায় বড় পুঁজির হুন্ডি ব্যবসায়ীরা বিদেশে বাড়ি ও ব্যবসায় বিনিয়োগ করলেও দেশে তাদের জায়গা জমি,ব্যবসা বা শহরের বাসা ও দোকান ভাড়ার টাকা দিয়েই হুন্ডি ব্যবসা চালান। অনেকেই জায়গা বিক্রি করে দেশের টাকা দেশে রেখেই বৈদেশিক টাকা দিয়ে ওই দেশে বিনিয়োগ করেন। এতে করে কোনো বৈদেশিক টাকাই বাংলাদেশের ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার হচ্ছেনা। ফলে ডলার,পাউন্ডসহ বৈদেশিক মুদ্রা সংগৃহীত হওয়ার প্রবাহ কমছে। জানা যায় জেলা জুড়ে গড়ে ওঠা এসকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এমন অনৈতিক পন্থায় বৈদেশীক মুদ্রা লেনদেনের নেপথ্যে রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ওই চক্রটি জেলা শহর থেকে মনিটরিং করে পুরো জেলা।
জানা যায় জেলা শহর ছাড়াও ৬টি উপজেলায় রয়েছে এমন অর্ধশতাধিক দোকান। এতে করে বছরান্তে সরকার বড় ধরনের রাজস্ব হারাচ্ছে। জানা যায় বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সেল রয়েছে যা তদারকি করে বিভাগীয় শাখা। কিন্তু এ জেলা থেকে নাকি ওই রকম তথ্য তাদের কাছে না পৌঁছানোতে অভিযানে যায় না বাংলাদেশ ব্যাংকের এতদসংশ্লিষ্ট টিম। আর এ সুযোগে অবৈধভাবে মানি এক্সচেঞ্জ এর নাম করে হুনডি ব্যবসা চালাচ্ছে একটি চক্র। বাংলাদেশ ব্যাংক ঢাকা ও সিলেট শাখার ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুঠোফোনে বলেন মৌলভীবাজার জেলাটি প্রবাসি অধ্যুষিত। ওখানে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আসাটা খুবই স্বাভাবিক। অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ বা হুন্ডি বন্ধ করতে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ব্যাংক তরফে সরাসরি অভিযানে যেতে আমাদের অনেক প্রসিজিওর ম্যান্টেন করতে হয়। অবৈধ ব্যবসার বিষয়ে মনিটরিংয়ের এখতিয়ার রয়েছে ওখানকার জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের।
জানা যায় মৌলভীবাজার শহরের বেরীরপাড় পয়েন্টে রয়েল ম্যানশন নামের একটি মার্কেট ও আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছে এসকল অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ওখানে বিভিন্ন নামসর্বস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে চলে এসব অবৈধ ব্যবসা। তাদের নিজস্ব এজেন্ট রয়েছে জেলার বিভিন্ন হাট বাজারেও। তারা রাজস্ব ফাঁকির পাশাপাশি প্রতারণার মাধ্যমে প্রবাসিদেরকেও নানা ভাবে ঠকাচ্ছে। রয়েল ম্যানশনের সামনে ওই সকল অবৈধ ব্যবসায়ীরা তাদের লোকজন দিয়ে পথচারী বা আগুন্তুকদের টাকা বিনিময়ের (ডলার, পাউন্ড ভাংগানোর) অফার করে। গেল সপ্তাহে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল বেরিপাড় দর্জিমহল্লা এলাকার রয়েল ম্যানশনে রাতে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে বৈদেশীক মুদ্রা লেনদেনের জন্য তিন ব্যবসায়ীকে আটক করে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশ সুত্রে জানা যায় যতাযত তথ্য উপাথ্যের ভিত্তিতে ওই তিনজন অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীকে তারা আটক করেন। আটককৃতরা হলেন সৈয়দ কেনান আলী (৩৭)প্রো: সায়েক এন্টার প্রাইজ। মোঃ রুমান আলী (৪১) রুমান এন্টার প্রাইজ। মোঃ রনি মিয়া (২৫) রুমান এন্টার প্রাইজ এর কর্মচারী। এ সময় তাদের কাছ থেকে পাউন্ড, ডলার, রিয়াল, দিরহাম, দিনার,বাথসহ বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রির বিভিন্ন নোটের বাংলাদেশী নগদ এক লক্ষ একানব্বই হাজার টাকা জব্দ করে। পুলিশ বাদী হয়ে আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করে। আসামী হলেন সৈয়দ কেনান আলী (৩৭), মোঃ রুমান আলী (৪১), মোঃ রনি মিয়া (২৫) নোবেল তরফদার টিটু (৪২),আব্দুল কাইয়ুম (৩৪), মামুন (৩২), আলম (৪০), জমির মিয়া (৪০) এদের মধ্যে ৩ জন কারাগারে রয়েছেন অন্যরা পলাতক।
জেলা পুলিশ সুপার মো: মনজুর রহমান পিপিএম (বার) বলেন আমরা ইতিমধ্যে কয়েকজনকে অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসায়ীকে ধরেছি। আমাদের হাতে তালিকা রয়েছে। সে অনুযায়ী অন্যদেরকেও আটক করা হবে। আমাদের এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
জেলা প্রশাসক ড.ঊর্মি বিনতে সালাম বলেন বিষয়টি নিয়ে আমরা গুরুত্ব দিয়েই কাজ করছি। প্রবাসীরা যাতে বৈধ পথে টাকা পাঠান সে জন্য জেলা প্রশাসন থেকে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসা যাতে বন্ধ করা যায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে সচেতনতার পাশাপাশি কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।